বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০০ অপরাহ্ন
কক্সবাজারের টেকনাফে এক বিএনপি পরিবারের ঘরে বর্বর হামলার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার দিবাগত রাতে হামলাকারীরা দরজা-জানালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ঘরটির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বাথরুমের বেসিন আর কমোড পর্যন্ত ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। এমনকি হামলাকারীদের হামলা থেকে ঘরের কোনো ব্যবহার্য জিনিষ-পত্রও অক্ষত নেই। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, হামলাকারীরা ওই ঘরের পাহারাদারদের একটি কক্ষে আটকিয়ে রেখে আলমিরা ভেঙে লুটে নিয়েছে ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৫ লাখ টাকা।
বিএনপি পরিবারের লোকজন জানান, অন্তত ২১ জন হামলাকারীর মধ্যে ১০/১২ জনই ছিলেন পুলিশের পোশাক পরিহিত। অন্যান্যরা লাঠিসোটা ও দা-খন্তি নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। তবে টেকনাফ থানার ওসি বলেছেন, বিএনপি নেতার ঘরে হামলার ঘটনায় কোনো পুলিশ ছিল না।
শুক্রবার রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কানজরপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এমপি বদির চলন্ত গাড়িতে হামলার ঘটনার পর একই রাতে বিএনপি পরিবারের ঘরটিতে হামলার ঘটনা ঘটে।
এলাকার লোকজন জানিয়েছে, হামলার শিকার হওয়া পরিবার প্রধান জুনায়েদ আলী চৌধুরী টেকনাফ উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়ন বিএনপির (উত্তর শাখা) সভাপতি। জুনায়েদের বাবা প্রয়াত মোস্তাক আহমদ চৌধুরী টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। টেকনাফ উপজেলা যুবদল নেতা জুনায়েদের প্রয়াত দাদা আলী মিয়া চৌধুরী ছিলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সংগঠক।
প্রতক্ষদর্শী ও জুনায়েদ আলীর পরিবারের লোকজন জানান, হামলাকারিরা দুটি হায়েস মাইক্রো নিয়ে এসে বাড়িতে ঢোকে। তাদের হাতে নানা সরঞ্জামাদি ছিল। যেগুলো দিয়ে নির্বিচারে বাড়ির দামী দামী আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এর আগে তারা দরজার তালা ভেঙে ঢুকে পড়ে। এ সময় কাজের মেয়েরা বাধা দিলে তাদের হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে একটি কক্ষের দরজা বন্ধ করে তালাবদ্ধ করে রাখে। প্রায় ১ ঘণ্টা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলে জানানো হয়।
টেকনাফের হোয়াইক্যং বাজারের লন্ড্রী দোকানের মালিক প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ তাহের জানান, শুক্রবার রাত ৩ টার দিকে দুটি মাইক্রোবাসে করে একদল লোক নামে। তাদের অনেকের গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল। তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘরের দরজা-জানালা নির্বিচারে ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে।
বিএনপি পরিবারের গৃহকর্মী রোকসানা বলেন, হামরাকারীদের অনেকের গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা হুমকি ধমকি দেন। পরে একটি কক্ষে আমাদের ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখেন।
যুবদল নেতা জুনায়েদ আলী চৌধুরীর মা রাশেদা আক্তার চৌধূরী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঘটনার রাতে আমার ছেলেসহ কেউ আমরা বাড়িতে ছিলাম না। আমরা কক্সবাজার জেলা শহরের বাসায় ছিলাম। আমার ছেলে জুনায়েদ ইটখোলা ও চিংড়ি চাষের ব্যবসা করে। রাজনীতি করলেও কোনো মামলা-মোকাদ্দমার ঘটনায় জড়িত নেই।
রাশেদা চৌধুরী আরো জানান, ঘরে তার রক্ষিত ১০ ভরি এবং পুত্রবধূর ৩০ ভরি স্বর্ণালংকারও হামলাকারীরা লুটপাট করে নিয়েছে। সেই সাথে পুত্রের ইটখোলার কয়লা ক্রয়ের জন্য ঘরে রাখা নগদ ৫ লাখ টাকাও হামলাকারিরা লুটে নিয়েছে।
জুনায়েদ আলী চৌধুরীর সহধর্মীনী বলেন, ভোররাতে খবর পেয়ে আমরা চলে এসে দেখি, শ্বাশুড়ি ও আমার ৪০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৫ লাখ টাকা নেই। ঘরে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে সবজিনিস ভাঙচুর করে ফেলেছে।
তিনি আরো বলেন, তার স্বামী বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তার পিতা জাফর আলম চৌধুরী ছিলেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি। সেই সাথে তার ছোট ভাই আলমগীর চৌধুরী বর্তমানে স্থানীয় হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য।
হামলার কারণে নিরাপত্তার অভাবে পরিবারের সদস্যরা গতকাল সন্ধ্যায় আবারো কক্সবাজার শহরের বাসায় চলে গেছেন বলে জানান রাশেদা চৌধুরী। তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা যেভাবে ম্যাচাকার করেছে তাতেও ঘর পরিষ্কার করতে অন্তত এক সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।
এদিকে ঘটনাস্থলের মাত্র ৫০ গজ দূরেই হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ি। ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক সুব্রত রায় কালের কণ্ঠকে জানান, আমি আমার পার্শ্ববর্তী জুনায়েদ চৌধুরীর ঘরে হামলার বিষয়টি সকালেই মাত্র শুনেছি। বিষয়টি আমি তৎক্ষণাৎ টেকনাফ থানার ওসি স্যারকে জানিয়েছি।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, ঘটনার বিষয়টি আমি পরস্পর শুনেছি মাত্র। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এ ঘটনার সাথে আমার থানার পুলিশের কোনো সম্পর্কই নেই।
কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক কামরুল আজম জানান, জেলা ডিবি পুলিশের কোনো সদস্যরা টেকনাফ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেননি।
এদিকে কক্সবাজার-৪-(টেকনাফ-উখিয়া) সংসদীয় আসনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শান্ত পরিস্থিতিকে অহেতুক অশান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতির জন্য বিএনপি দায়ী করেছে স্থানীয় এমপি আবদুর রহমান বদি ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশকে।
বিএনপি নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, এমপি বদি নিজেই ইয়াবাকারবারিদের সাথে নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের এলাকাছাড়া করার জন্য প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে টেকনাফ থানার ওসির বিরুদ্ধে বিএনপিকে দমন নিপীড়নেরও অভিযোগ উত্থাপন করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
কক্সবাজার জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। সেই সাথে টেকনাফের ইয়াবাকারবারিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনী সুষ্ঠু পরিবশে সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিবরণ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এবং কক্সবাজার-৪ আসনের বিএনপি দলীয় এমপি পদপ্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা বেগম স্বপ্না বলেন-টেকনাফ সীমান্তের পরিস্থিতি ক্রমশ এক তরফা উত্তপ্ত করে তোলা হচ্ছে। সর্বশেষ শুক্রবার দিবাগত রাতে টেকনাফের যুবদল নেতা জুনায়েদ চৌধুরীর ঘরে পুলিশ ও দুর্বৃত্তদল হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও দামী জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়েছে। হামলাকারীদের বর্বর ঘটনায় প্রায় এককোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে জানান তারা।
গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এর অধীনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় ঐক্যজোটের শরীকরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে ভোটের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
পরিতাপের বিষয়, আমরা যখন নির্বাচনে যাচ্ছি ঠিক তখনই আওয়ামী লীগ তাদের নতজানু প্রশাসনকে নগ্নভাবে ব্যবহার করছে। ইসির নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করে রাজনৈতিক মামলা অব্যাহত রেখেছে। বিএনপিসহ জোটের নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে তল্লাশি, ভাঙচুর, লুট চালাচ্ছে। সাজানো মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করার নতুন পাঁয়তারা শুরু করেছে।